এনটিভি প্রাঙ্গণে আবদুস শহিদের জানাজা, সহকর্মীদের শ্রদ্ধা

নিজস্ব প্রতিবেদক।

সাংবাদিক আবদুস শহিদ প্রায় ১৩ বছর এনটিভিতে কাজ করে কিছুদিন আগে পদোন্নতি পেয়ে হয়েছিলেন যুগ্ম প্রধান বার্তা সম্পাদক। তাঁর পদচারণায় মুখর থাকত রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিএসইসি ভবনে অবস্থিত এনটিভির কার্যালয়। প্রিয় কর্মস্থলে আজ রোববার শেষবারের মতো আসেন তিনি নিথর দেহে। কিন্তু যাওয়ার আগে সবাইকে কাঁদিয়ে যান।

নভেল করোনাভাইরাসসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে আবদুস শহিদ আজ বেলা পৌনে ১১টার দিকে রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। জ্যেষ্ঠ এ সাংবাদিককে হারিয়ে তাঁর প্রিয় প্রতিষ্ঠান ও সহকর্মীদের মধ্যে  নেমে আসে শোকের ছায়া।

বিকেল সাড়ে ৩টার পর থেকে এনটিভির কর্মীরা একে একে বিএসইসি ভবনের নিচে  নামতে থাকেন। ৩টা ৫৫ মিনিটের দিকে জানাজার উদ্দেশে লাইনে দাঁড়িয়ে যান সবাই। অশ্রুশিক্ত কর্মীরা অপেক্ষা করছিলেন আবদুস শহিদের জন্য। তখনো তাঁর লাশবাহী গাড়িটি এসে পৌঁছায়নি সেখানে।

ঠিক বিকেল ৪টায় আল মার্কাজুল ইসলামী নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের লাশবাহী  গাড়ি এসে থামে বিএসইসি ভবনের নিচে। তখন অনেকের চোখ ভিজে ওঠে। লাশের ভারে ভারি হয়ে ওঠে পুরো পরিবেশ। অনেকে চোখ মুছছিল সে সময়। মেনে নিতে পারছিল না প্রিয় সহকর্মীর এ প্রয়াণ। ঠিক এমন এক মুহূর্তে এক সহকর্মী বলে ওঠেন, ‘বড্ড ভালো মানুষ ছিলেন তিনি। শত চেষ্টা করেও এখন আরেকজন শহিদ হয়ে ওঠা কঠিন।’

করোনাভাইরাসে মৃত্যুর কারণে আবদুস শহিদের মরদেহ লাশবাহী ওই গাড়িতে রাখা হয়। এই অবস্থায় বিকেল ৪টা ২ মিনিটে জানাজা পড়ানো শুরু করেন এনটিভির স্টুডিওর সিনিয়র লাইটম্যান মো. আবুল কালাম। জানাজা শেষে সহকর্মীরা তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করে মহান আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করেন। মোনাজাত শেষে জ্যেষ্ঠ এই  সাংবাদিকের অকাল প্রয়াণে এনটিভির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ্ব মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলীর পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক আশফাক উদ্দিন আহমেদ এবং হেড অব নিউজ জহিরুল আলম।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বিকেল সোয়া ৪টার দিকে মরদেহ নিয়ে লাশবাহী গাড়িটি লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ গ্রামের উদ্দেশে রওনা হয়।

জানাজায় উপস্থিত ছিলেন এনটিভির পরিচালক আশফাক উদ্দিন আহমেদ, হেড অব নিউজ জহিরুল আলম, হেড অব ফাইন্যান্স গোলাম রওশন ইয়াজদানী, প্রধান বার্তা সম্পাদক এস এম আকাশ, যুগ্ম প্রধান বার্তা সম্পাদক ফকরুল আলম কাঞ্চন, এনটিভি অনলাইন বিভাগের প্রধান খন্দকার ফকরউদ্দীন আহমেদ জুয়েলসহ বিভিন্ন বিভাগের কর্মীরা।

এ ছাড়া নিচে উপস্থিত ছিলেন এনটিভির এইচআর অ্যান্ড অ্যাডমিনের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার সুলতানা এ বানু, হেড অব মার্কেটিং রঞ্জন কুণ্ডসহ অনেকে।

এর আগে আবদুস শহিদের মৃত্যুতে এনটিভি পরিবারের পক্ষ থেকে চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ্ব মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি আবদুস শহিদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

আবদুস শহিদের বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। তিনি স্ত্রী ও এক ছেলে রেখে গেছেন।

গত ২৫ জুলাই আবদুস শহিদের করোনাভাইরাসজনিত কোভিড-১৯ রোগ শনাক্ত হয়। শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় ২৭ জুলাই তাঁকে রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে ২৮ জুলাই তাঁকে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ তাঁর মৃত্যু হয়। 

১৯৫৭ সালে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ গ্রামে আবদুস শহিদের জন্ম হয়। সৃজনশীল এই মানুষটি তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবনে এনটিভিসহ দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে কাজ করেছেন। সাংবাদিকদের নেতৃত্বেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তিনি। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজের একাংশের সভাপতি হিসেবে সফলতার সঙ্গে নেতৃত্ব দেন আবদুস শহিদ। এ ছাড়া জাতীয় প্রেসক্লাব ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থেকে সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ে কাজ করে গেছেন তিনি। তিনি সাংবাদিকতার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও সেবামূলক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

লক্ষ্মীপুরে গ্রামের বাড়িতে আবদুস শহিদ তাঁর মা-বাবার নামে আফিয়া-বারী হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করেন। এনটিভির সংবাদকে গণমানুষের কাছে জনপ্রিয় করার পেছনে তাঁর ছিল বিশেষ ভূমিকা।

আবদুস শহিদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে এনটিভির পরিচালক আশফাক উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে আমরা সবাই শকড, শোকাহত ও মর্মাহত। আমাদের বলার ভাষা নেই। আমাদের এখনো মনে হচ্ছে, উনি আমাদের মাঝে আছেন। তিনি চিরকাল আমাদের মাঝে থাকবেন, ইনশাআল্লাহ। আপনারা সবাই তাঁর জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহতায়ালা উনাকে জান্নাত নসিব করুন এবং উনার পরিবারকে শোক সহ্য করার ক্ষমতা দিন।’

আবদুস শহিদের মৃত্যু প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন এনটিভির হেড অব নিউজ জহিরুল আলম। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘শহিদ ভাই এভাবে চিরবিদায় নেবেন, কখনো ভাবিনি। ভেবেছি, শহিদ ভাই ফিরে আসবেন আমাদের মাঝে। প্রতিটি মুহূর্তে দোয়া করেছি তাঁর জন্য। আল্লাহ তাঁকে চির শান্তিতে রাখুন। আমি আসলেই খুব শোকাহত। কারণ, শহিদ ভাই আমার দীর্ঘদিনের সহকর্মী।’

এনটিভির এইচআর অ্যান্ড অ্যাডমিনের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার সুলতানা এ বানু আবদুস শহিদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। সুলতানা এ বানু গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, ‘উনি (আবদুস শহিদ) আমাদের রেখে এভাবে চলে যাবেন, আমি আজকেও এটা বিশ্বাস করতে পারছি না। আমি তাঁর খবর জেনেছিলাম, কিন্তু এতটা খারাপ হয়ে যাবে আর আজকে এত বড় নিউজ শুনতে পারব, তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না।’

এনটিভি অনলাইনের প্রধান খন্দকার ফকরউদ্দীন আহমেদ জুয়েল আবদুস শহিদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রিয় শহিদ ভাই আমাদের মাঝে নেই, এটা আমরা ভাবতে পারছি না। উনি আমাদের সবার সজ্জন একজন ব্যক্তি ছিলেন। খুবই কষ্ট লাগছে।’

ডিএন/পিএন/জেএএ/১১:১৮পিএম/২৩৮২০২০৩৪

Print Friendly, PDF & Email